পৃথিবীর কোনো দেশ এখন আর পরিপূর্ণভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, প্রত্যেকটি দেশকেই কোনো না কোনো দ্রব্যের জন্য অন্যান্য দেশের উপর নির্ভর করতে হয়। যে দেশ যেটি উৎপাদন করে সেই দেশ সেটি রপ্তানি করে, এবং যে দেশে যেটি প্রয়োজন সেটি অন্য দেশ থেকে আমদানি করে। সে কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমরা বিশ্বগ্রামের ধারণাটি পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হতে দেখি। শক্তিশালী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপর দেশের উন্নয়ন নির্ভরশীল। ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় বিশ্বগ্রাম ব্যবস্থা ব্যাপক ভূমিকা পালন করে চলেছে। তথ্য প্রযুক্তির প্রভাবে আজকাল ব্যবসা-বাণিজ্যেও অভাবনীয় পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতাকে তাদের উৎপাদিত পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য অন্যত্র যেতে হয় না। উৎপাদিত পণ্য বা সেবার গুণগতমান অনলাইনের মাধ্যমে স্থানীয় এবং বিশ্ববাজারে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হচ্ছে। ক্রেতা বা ভোক্তাগণ তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী পণ্য ক্রয় করতে সক্ষম হচ্ছেন। তাই ব্যবসা-বাণিজ্য আজকাল আর ভৌগোলিক সীমানায় আবদ্ধ নেই। বিশ্বব্যাপী ই-কমার্স, ই-বিজনেস, অনলাইন শপিং-এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ইলেকট্রনিক্স কমার্স বা ই-কমার্সই এ যাত্রার পথিকৃৎ হিসেবে বিবেচিত।
আধুনিক ডেটা প্রসেসিং এবং কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বিশেষত ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পণ্য বা সেবা বিপণন, বিক্রয়, সরবরাহ, ব্যবসা সংক্রান্ত লেনদেন ইত্যাদি কাজকে সম্মিলিতভাবে ইলেকট্রনিক কমার্স বা ই-কমার্স বলে। ই-কমার্স ওয়েব সাইটে পণ্যের গুণগত মান, বর্ণনা, ছবি ও মূল্য সম্পর্কিত তথ্য উল্লেখ থাকে। ই-কমার্সের পরিচিত কতকগুলো ওয়েব সাইট হলো, www.bikroy.com, www.daraz.com, www.alibaba.com, www.amazon.com ইত্যাদি।
বাংলাদেশে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার মাঝেও ইতোমধ্যে ই-কমার্সের কার্যক্রম চালু হয়েছে। ইদানীং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় অনেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান তাদের স্থানীয় শেয়ার বাজারের তথ্য এবং উৎপাদিত পণ্যের প্রচার এবং নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর হোম ডেলিভারির বিজ্ঞাপন করে থাকেন। এতে করে উৎপাদিত পণ্যের বাজার দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরা যায় এবং বৈশ্বিক ব্যবসা- বাণিজ্যের সুফল আমরা পেতে পারি। প্রযুক্তি শেয়ার ও স্থানান্তরের মাধ্যমে উন্নত হবে শিল্প কারখানাগুলো। বিশ্বমানের ব্যবস্থায় উৎপাদিত পণ্য হবে আন্তর্জাতিক মানের। ফলে সম্প্রসারিত হবে বৈশ্বিক ব্যবসা- বাণিজ্যের। এক্ষেত্রে লেনদেনে ব্যবহৃত হয় ইএফটি (EFT: Electronic fund transfer) যেটি এক ধরনের ইলেকট্রনিক লেনদেন যা সংঘটিত হয় কম্পিউটার ও নেটওয়ার্কের সাহায্যে। একই ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার অ্যাকাউন্টের মধ্যে অথবা বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের মধ্যে, কিংবা বৈদেশিক ব্যাংকের মধ্যেও এ ধরনের লেনদেন করা যায়। এছাড়া ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রায় প্রতিটি ব্যাংকের আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করা যায়। অনলাইন ব্যাংকিং নামে পরিচিত এই পদ্ধতিটিকে বর্তমান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অন্যতম পরিসেবা হিসেবে গণ্য করা যায়। এ ধরনের পদ্ধতিতে লেনদেনকে ইন্টারনেট ব্যাংকিংও বলা হয়। এই ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় গ্রাহকগণকে লেনদেন সম্পন্নের জন্য সশরীরে কোনো ব্যাংক শাখায় যাওয়ার প্রয়োজন হয় না; বাড়িতে বা কর্মস্থলে কিংবা ভ্রমণরত অবস্থাতেও এই কার্যক্রম সম্পন্ন করা যায়। এজন্য শুধু কম্পিউটার বা স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেট সংযোগ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড প্রয়োজন হয়।
আরও দেখুন...